Sunday, May 19, 2024
spot_img
Homeপাঠকের পছন্দগাড়ি থামিয়ে নিজের জামা খুলে লোকটির গায়ে পরিয়ে দিলেন ফরীদি...

গাড়ি থামিয়ে নিজের জামা খুলে লোকটির গায়ে পরিয়ে দিলেন ফরীদি…

বিনোদন ডেস্ক | প্রতিদিনবাংলা.কম

হুমায়ুন ফরীদি (জন্ম: ২৯ মে ১৯৫২—মৃত্যু ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২
টিকিটের দাম চার পয়সা জোগাড় করতে না পারা ফরীদি হয়েছিলেন সিনেমার বড় তারকা। খসে পড়া তারকা নয়, বাংলা ভাষায় অভিনয় করা অন্যতম সেরা শিল্পী হিসেবে তিনি আজও জ্বলজ্বলে। হুমায়ুন ফরীদির প্রয়াণবর্ষ আজ।

খেতে ভালোবাসতেন বলে বাবুর্চি হতে চেয়েছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। সিনেমা দেখার নেশা তৈরি হলে দেখা গেল পয়সা জোগাড় করতে পারছেন না। তখন ভাবলেন সিনেমা হলের গেটে দারোয়ান হবেন। হুমায়ুন ফরীদি কী হতে পেরেছিলেন, সে কথা সবারই জানা। জীবনের শেষ দিকে খেতে পারতেন সামান্যই। টিকিটের দাম চার পয়সা জোগাড় করতে না পারা ফরীদি হয়েছিলেন সিনেমার বড় তারকা। খসে পড়া তারকা নয়, বাংলা ভাষায় অভিনয় করা অন্যতম সেরা শিল্পী হিসেবে তিনি আজও জ্বলজ্বলে। হুমায়ুন ফরীদির প্রয়াণবর্ষ আজ। চলে যাওয়ার ১২ বছর আজ।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, তখনই পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্ম নেওয়া ফরীদির অভিনয়জীবনের শুরু ছাত্রজীবনে। মঞ্চে কাজ করতেন তিনি। টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এ।

অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি মঞ্চকে বিশুদ্ধ ও সত্য বলে মানতেন। যে মাধ্যমে লুকোছাপা চলে না, ছোট্ট একটা পরিসরকে করে তোলা যায় অতিকায়, সেই মাধ্যমকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন ফরীদি। অভিনেতা হিসেবে জয় করেছিলেন মঞ্চ ও মানুষের মন। ঢাকা থিয়েটারের শিল্পী হয়ে তিনি অভিনয় করেছিলেন শকুন্তলা, মুনতাসির ফ্যান্টাসি, কীত্তনখোলা, ফণিমনসা, কেরামতমঙ্গল, ধূর্ত উই নাটকগুলোতে। তারপর একদিন, ১৯৯২ সাল, মঞ্চ ছেড়ে চলে যান টেলিভিশনে।

তিনি বলেন, মুখোশ যখন খুলল বা এ রকম কিছু। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একবার যাত্রাও করতে গিয়েছিলেন তিনি। কেন? সে কারণ বড্ড বেদনার। তবে তাঁর অভিনয় শুরু করার সময়কাল ১৯৬৫-৬৮ সাল। এমএ পাস করার পর ফরীদি দেখেছিলেন ব্যবসা বা চাকরি কোনোটাই তাঁর জন্য নয়। জানেন না অন্য কোনো কিছু। অভিনয় করেই তাই রোজগার করতে চেয়েছিলেন। মঞ্চ, টেলিভিশন ও বড় পর্দা জয় করে একদিন অভিমান করে ছেড়ে দিয়েছিলেন অভিনয়ও।

‘সংশপ্তক’ নাটকে হুমায়ুন ফরীদি ও খলিলছবি: সংগৃহীত

টিভি নাটক ভালো হচ্ছে না, সিনেমা ভালো হচ্ছে না। তিনি আর অভিনয় করবেন না। এ রকম এক সময়ে তাঁকে বলা হয়েছিল, তবে কি আবার মঞ্চে ফিরবেন?

অভিনয় কীভাবে শুরু করেছিলেন? এ প্রশ্ন করলেই বাবার পকেট থেকে ১০ টাকা চুরির গল্পটা বলতেন। ধরা পড়ার পর বাবা যখন জানতে চাইলেন টাকা নিয়েছেন কি না, তিনি এমন ভাব করতেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না’। ওটাই নাকি ছিল তাঁর প্রথম অভিনয়। আর সত্যিকারের অভিনয় মাদারীপুরে থাকাকালে, কলেজের বার্ষিক নাট্যোৎসবে। কী যেন নাম সেই নাটকের?

হুমায়ুন ফরীদি সত্যিই ছিলেন পরিশ্রম আর মেধার যুগলবন্দী। ছবি: সংগৃহীত

একবার গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে ফরীদি দেখলেন রাস্তার পাশে শীতে কষ্ট পাচ্ছেন এক বৃদ্ধ। তিনি গাড়ি থামিয়ে নিজের জামা আর ব্লেজার খুলে লোকটির গায়ে পরিয়ে দিয়েছিলেন। নিজে বাড়ি ফিরেছিলেন খালি গায়ে।

তখন ৫৮ বছর বয়স তাঁর। বলেছিলেন, আর মঞ্চে ওঠা হবে না। শরীরটা শেষ। যে জীবন তিনি যাপন করছিলেন, সেটা মঞ্চের শুদ্ধ সরোবরে গা ডোবানোর জন্য যথাযথ নয়। শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদি।

শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত সন্ত্রাস দিয়ে শুরু হয় তাঁর চলচ্চিত্রযাত্রা। খলনায়ক হিসেবে তাঁর মতো এত খ্যাতি আর কাউকে পেতে দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘ভিলেনের অভিনয় করা সহজ। যা খুশি তাই করা যায়। কোনো বাধা নেই। নায়ক সেটা পারে না। তাকে ছকে আটকে থাকতে হয়। নায়ক মায়ের গায়ে হাত তুলতে পারবে না, কিন্তু ভিলেন বাবাকে পেটাতে পারে।’বেশ কজন মিলে সিনেমা প্রযোজনাও করেছিলেন তাঁরা। পালাবি কোথায় নামের সেই ছবিতে লোকসান হয়েছিল।

হুমায়ুন ফরীদি অত্যন্ত নরম মনের মানুষ ছিলেন। তাঁর প্রয়াণের পর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের এক সহপাঠী স্মৃতিচারণা করেছিলেন তাঁকে নিয়ে। বলেছিলেন, একবার গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে ফরীদি দেখলেন রাস্তার পাশে শীতে কষ্ট পাচ্ছেন এক বৃদ্ধ। তিনি গাড়ি থামিয়ে নিজের জামা আর ব্লেজার খুলে লোকটির গায়ে পরিয়ে দিয়েছিলেন। নিজে বাড়ি ফিরেছিলেন খালি গায়ে।

তখন হুমায়ুন ফরীদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গুলির বিকট শব্দে এক ভোরে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি নিরাপত্তারক্ষীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, কিসের শব্দ? জানা গেল কে বা কারা পাখি শিকার করছে। হুমায়ুন ফরীদি বললেন, ‘ধরে নিয়ে আয়’। রুস্তম নামের সেই নিরাপত্তারক্ষী সত্যি সত্যি দুই ভদ্রলোককে ধরে নিয়ে এলেন। তাঁরা ভয়ে জড়সড়। চোখমুখ শুকিয়ে গেছে। তাঁদের দেখে হুমায়ুন ফরীদির মায়া হয়। তিনি ক্যানটিন থেকে নাশতা এনে তাঁদের খাওয়ান। তারপর বলেন, ‘পাখি হত্যা করা ঠিক নয়। তারা তো অতিথি। তা ছাড়া পরিবেশের জন্যও এরা জরুরি।’

ব্যক্তিজীবনে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন হুমায়ুন ফরীদি। এ বিয়ে তখন সারা দেশে আলোড়ন তোলে। সেই সংসারে তাদের কন্যাসন্তানের নাম দেবযানী। পরে তিনি ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে, ২০০৮ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

সেসব সম্পর্ক নিয়ে অকপটে বলেছেন, ‘আমি দুটো বিয়ে করেছি। কোনোটাই টিকেনি। একটা টিকেছিল চার বছর, আরেকটা বাইশ বছর। আমার প্রথম স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীও আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। এটা নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। দে মাস্ট হ্যাভ দেয়ার রিজনস।’

তবে ব্যক্তিজীবন ছাপিয়ে হুমায়ুন ফরীদি সবার প্রিয় অভিনেতা হিসেবে এখনো আবিষ্ট করে রেখেছেন অগুনতি দর্শক-সমালোচককে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments