Tuesday, May 7, 2024
spot_img
Homeজাতীয়স্বাধীনতার জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ

স্বাধীনতার জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | প্রতিদিনবাংলা.কম

ঢাকা: ৭ মার্চ বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দিন। দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ১৯৭১ সালের এ দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে মুক্তিযু্দ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন।

মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী এবং যে কোনো সময় জাতিকে অস্ত্র হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হবে- ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সেটা স্পষ্ট করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। পরাধীনতা থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এ ভাষণ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে একটি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা অর্জনে যে গেরিলাযুদ্ধের প্রয়োজন, তার প্রস্তুতি নেওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ গুরুত্ব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবেও স্বীকৃত। এটি অলিখিত ও বিশ্বের সর্বাধিকবার প্রচারিত ভাষণ।  

২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেসকো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এ ভাষণটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) স্বীকৃতি দেয়।  

১৯৭১ সালের এ দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। ’ 

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এ ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। তার এ ভাষণ ছিল জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সব দিক খেকে প্রস্তুত থাকার চূড়ান্ত নির্দেশনা।

এ দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তার এ ভাষণে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার জন্য মরণপণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য সশস্ত্র হতে ও অস্ত্র হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। মাত্র ১৮ মিনিটের ভাষণে তিনি কেন মুক্তিযু্দ্ধের প্রয়োজন এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে কি করতে হবে, সেসব দিক নির্দেশনাই দিয়ে দেন। তার এ ভাষণের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা।

তিনি বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি…, তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাক। ’ 
 
পাকিস্তানের শাসন-শোষণ-নিযাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছরের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত পর্বে এসে উপনিত হয় জাতি৷ আর এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷
স্বাধীনতার জন্য অদম্য স্পৃহা নিয়ে সংগ্রামরত মুক্তিকামী জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু সেদিন বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। ’ 

বঙ্গবন্ধুর ওই নির্দেশের পর ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের জন্য সে ভাবেই প্রস্তুতি নেন।

১৯৪৭ সালে ধর্মভিত্তিক ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে চাপিয়ে দেওয়া অসম পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসন শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। ধাপে ধাপে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা বাঙালি পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে আলাদা হতে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। বাঙালির এ স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  

৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন মাত্রাযুক্ত হয়। এর পর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার মানুষের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা শুরু করার পর পরই ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে (২৫ মার্চ রাত দেড়টা) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments