বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণরূপে নির্বাচনমুখী। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি চরম উত্তেজনায় প্রবেশ করেছে। অতীতের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যুত্থান এবং মতবিরোধ সত্ত্বেও—রাজনৈতিক দলগুলো একে একে নির্বাচন প্রস্তুতির ট্রেনে উঠে পড়েছে।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণা আসার পরপরই নির্বাচন কমিশন পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুতি শুরু করেছে।
রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয়তা, বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত
যদিও ‘জুলাই সনদ’ ও পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়ে গেছে, তবুও নির্বাচন বর্জনের মতো কোনো বার্তা আসছে না।
- জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ করেছে।
- বিএনপি জানিয়েছে, খুব দ্রুত আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “ভিন্নমত থাকলেও সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।”
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি: রোডম্যাপ অনুযায়ী এগোচ্ছে পরিকল্পনা
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, তা অনুযায়ী ইতোমধ্যেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে:
- ভোটার তালিকা হালনাগাদ
- সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ
- নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম
- প্রশিক্ষণ ও ভোটকেন্দ্র পুনর্বিন্যাস
কমিশন জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
- ১০টি দেশে প্রায় ১৬ হাজার প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
- তাদের মাঝে ১৪ হাজারের বেশি ভোটার ইতোমধ্যে স্মার্ট এনআইডি কার্ড পেয়েছেন।
এই পদক্ষেপ নির্বাচনকে আরও অংশগ্রহণমূলক করতে সহায়তা করবে।
প্রশাসনিক কাঠামোয় পরিবর্তন: দলনিরপেক্ষতা নিশ্চিতে পদক্ষেপ
নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে:
- জনপ্রশাসন সচিব পরিবর্তন করেছে,
- কয়েকটি জেলায় নতুন ডিসি (জেলা প্রশাসক) নিয়োগ দিয়েছে,
- নির্বাচনকালীন প্রশাসনের জন্য ‘ফিটলিস্ট’ তৈরি করছে।
ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তাই তাদের নিরপেক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি: সেনাবাহিনীসহ সক্রিয় থাকবে সব সংস্থা
নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা বা অনিয়ম রোধে:
- পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার এবং সেনাবাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
- অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে ভোটারদের নিরাপত্তা এবং আস্থা বৃদ্ধি পায়।
অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের উদ্যোগ
অন্তর্বর্তী সরকার চায়—নির্বাচনের সময় যেন:
- বাজারে অস্থিতিশীলতা না থাকে,
- ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা না ঘটে,
- বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় থাকে।
তাই সরকারের অগ্রাধিকার—নির্বাচনের পাশাপাশি অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা।
নির্বাচন কমিশনের বাজেট ও পরিকল্পনা
সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং সুশৃঙ্খল নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের জন্য নির্ধারিত বাজেট:
- মোট বাজেট: ২,৯৫৬ কোটি টাকা
- ব্যয় হবে নির্বাচন সামগ্রী, প্রশিক্ষণ, ইভিএমসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে।



