সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | প্রতিদিনবাংলা.কম
একক প্রার্থী নীতি, তরুণ প্রজন্মের উত্থান, জোট রাজনীতির টানাপোড়েন ও ইশতেহার প্রস্তুতি—সব মিলিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি এখন কঠিন সমীকরণের মুখে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম বিএনপি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হলেও, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির সামনে রয়েছে জটিল সব সমীকরণ—মনোনয়ন, জোট রাজনীতি, জনআস্থা পুনরুদ্ধার এবং তরুণ ভোটারদের আকর্ষণ।
🔹 প্রার্থী বাছাইয়ে ধীরগতি, তবে প্রস্তুতি পুরোদমে
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে প্রায় ২০০ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। এবার শতাধিক আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। একাধিক প্রার্থী থাকলেও, দলীয় হাইকমান্ড একক প্রার্থী নীতিতেই অনড়। প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, “প্রার্থী নির্বাচনের কাজটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলছে। জেলা ও বিভাগভিত্তিক যাচাই শেষে দ্রুত একক প্রার্থীদের মাঠে পাঠানো হবে।”
🔹 তরুণ প্রজন্ম ও নতুন নেতৃত্বের সংমিশ্রণ
দলের নীতিনির্ধারকরা জানাচ্ছেন, এবার নবীন ও প্রবীণের সংমিশ্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সম্ভাব্য ৫০ থেকে ৬০টি আসনে তরুণ প্রার্থী দেখা যেতে পারে। তরুণ প্রজন্মের ভোটার সংখ্যা মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হওয়ায়, বিএনপি বিশেষভাবে তরুণদের আকৃষ্ট করতে চাইছে। ইতিমধ্যে অনেক তরুণ নেতা মাঠে নেমে প্রচারণা চালাচ্ছেন, স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন।
🔹 জোট রাজনীতি ও আসন ভাগাভাগিতে অস্থিরতা
বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আসন ভাগাভাগির সমীকরণ। জামায়াত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও অন্যান্য শরিক দলগুলো শতাধিক আসন দাবি করছে। তবে নতুন আরপিও অনুযায়ী মিত্র দলগুলো ‘ধানের শীষ’ প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না—যা জোট রাজনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে কিছু এলাকায় বিএনপি ও শরিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে কোন্দল দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দুর্বল শরিক প্রার্থীদের জন্য আসন ছাড়লে বিএনপির আসন সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তারেক রহমান আশ্বস্ত করেছেন, “জোট শরিকরা ভবিষ্যতের সরকারে অংশ নেবে—যাদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরই আসন দেওয়া হবে।”
🔹 নির্বাচনী ইশতেহারে ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ অঙ্গীকার
আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি যে ইশতেহার দেবে, তাতে থাকবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, দ্বিকক্ষ সংসদ, রাষ্ট্রপতি–প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, ও জনগণকেন্দ্রিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি।
প্রস্তাবিত ইশতেহারে আরও থাকবে—
- নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড,
- নারীদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড,
- কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড,
- বেকার ভাতা এবং বছরে ৬০ লাখ কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা।
এছাড়া ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাব’কে ইশতেহারের মূল কাঠামোতে রাখা হবে।
🔹 চ্যালেঞ্জ: আস্থা ও ভাবমূর্তি পুনর্গঠন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুবিধা পাবে—এমনটি ভাবা ভুল। বরং এখন জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলও ভোটের মাঠে সক্রিয়। তাছাড়া অতীতে বিএনপির শাসনকাল নিয়ে জনগণের মধ্যে যে হতাশা ছিল, তা পুরোপুরি দূর হয়নি।
তরুণ ও মধ্যবিত্ত ভোটারদের আস্থা অর্জনে বিএনপিকে তাই শুধু সমালোচনা নয়, বিকল্প রাষ্ট্রনীতির দিকও স্পষ্টভাবে দেখাতে হবে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন—
“বিএনপি যদি বাস্তবভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাব দিতে না পারে, তাহলে তরুণ প্রজন্ম তাদের প্রতি আস্থা হারাতে পারে।”
🔹 সারসংক্ষেপ
সবমিলিয়ে, বিএনপি এখন নির্বাচনী প্রস্তুতির চূড়ান্ত ধাপে। একদিকে অভ্যন্তরীণ ঐক্য বজায় রাখা, অন্যদিকে শরিকদের দাবির ভারসাম্য রক্ষা—এই দুই চ্যালেঞ্জেই দলটির আগামী দিনের সাফল্য নির্ভর করছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সামনে তাই একাধিক প্রশ্ন—
👉 দল কি নির্বাচনী মাঠে ঐক্য বজায় রাখতে পারবে?
👉 তরুণদের আস্থা কতটা পুনরুদ্ধার করতে পারবে?
👉 আর, জনগণ কি বিএনপির পুনরাগমন দেখতে প্রস্তুত?
সময়ের উত্তরই বলবে—বিএনপি কতটা প্রস্তুত এই কঠিন নির্বাচনী সমীকরণের জন্য।



